জাতীয়তাবাদের ধারণা [ The Concept of Nationalism ] : নেশন শব্দ থেকেই ন্যাশনালিজম শব্দের উৎপত্তি। অর্থাৎ বুৎপত্তি সেই নেশিও (Natio) শব্দটিই। জন্ম একই ধারায় হলেও অর্থের পার্থক্য রয়েছে যথেষ্ট। এখানে জাতি এবং জাতীয়তাবাদের অর্থের পার্থক্য থেকেই জাতীয়তাবাদের গূঢ়ার্থ স্পষ্ট করার চেষ্টা রয়েছে।
[ জাতীয়তাবাদের ধারণা ]
স্টিভেন র্যানচিম্যান বলেন, “ষোলো শতকের বুলগেরীয় জাতীয়তাবাদই এ ধরনের জাতীয়তাবাদের প্রথম উদাহরণ। অন্যদিকে টয়েনবি বলেছেন, “১৭৭৬ সালে আমেরিকার বিপ্লবের সময় জাতীয়তাবাদের যে সব শর্ত এতে জুড়ে দেওয়া হয়, ওটাই ছিল বিশ্বে প্রথম প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তির উত্থান। ১০ নোটন বলেছেন, “ইতালিতে এঁদুয়ার পরাজিত হওয়ার পর ১৮৯৬ সালে সেখানে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে। তিনি আরও বলেন, এঁদুয়ার পরাজয়ের পরই ইতালিতে জাতীয়তাবাদের অনুভূতি জেগে ওঠে, যা পরে প্রচার এবং সংগঠনের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়।”
লুইস, এল, স্লাইডার বলেন, আধুনিক জাতীয়তাবাদ সৃষ্টি হয় ১৬৮৮ সালে। এ সময়টি ছিল ইংরেজ বিপ্লবের গৌরবান্বিত সময়। তিনি এর সঙ্গে ১৭৭৬ সালের আমেরিকান বিপ্লব এবং ১৭৮৯ সালে সংঘটিত ফরাসি বিপ্লবের কথাও সমানভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। কয়েকজন পণ্ডিত অবশ্য ফরাসি বিপ্লব প্রসঙ্গে স্লাইডারের সঙ্গে একমত হয়েছেন। তাঁদের মতে, ১৭৮৯ সালে সংঘটিত ফরাসি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জনগণ সচেতন হয়ে ওঠে। জনমনের এই সচেতনতাই জাতীয়তাবাদের বীজ অঙ্কুরিত করে। ১২
জাতীয়তাবাদের এই ভিত্তি মজবুত হলে সেখানে একটি শক্তিশালী জাতি-রাষ্ট্র গঠন হতে পারে। ওয়াল্টার হাচিনসন তার সংজ্ঞায় জাতীয়তাবাদের উপাদান হিসেবে ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ভৌগোলিক আবাসভূমি ইত্যাদি সব উপাদানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। তিনি জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা দেন— এটি জাতীয় উপলব্ধিকে শক্তিশালী করার একটি সাধারণ আন্দোলন। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে জাতিগত ঐতিহ্য জাতিগত ঐতিহ্য এবং একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রক্রিয়া জোরদার হয়।
জাতীয়তাবাদ সব সময় বিদেশি শাসনের বিপরীতে অবস্থান নেয়। প্রায়ই জাতীয় ভাষা, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে জাগিয়ে রাখার সচেতনা আসে জাতীয়তাবাদের উপলব্ধি থেকে ১০ কোনের মতে, জাতীয়তাবাদের বড় উপাদান হলো, একটি জাতি-রাষ্ট্রের প্রতি জাগতিক আনুগত্য বাড়িয়ে তোলা। ১৪ স্লাইডার বলেছেন, “একটি আদর্শ ভৌগোলিক এলাকায় বসবাসরত মানুষ যখন একই ভাষায় কথা বলবে, একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য লালন করবে যার মাধ্যমে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে, সকলের মধ্যে ঐতিহ্যগত যোগাযোগ থাকবে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে একই ধর্মের অনুসারী হবে তখন সেখানে একটি আদর্শ জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠতে পারে। ”
এটা তখন একটি চুক্তি যখন এর মাধ্যমে স্বাধীনতা, নিরাপত্তা অথবা সম্ভ্রম রক্ষার প্রয়োজন হয়। যখন কোনো সমাজবদ্ধ মানুষের মধ্যে অদৃশ্য কোনো বন্ধন তৈরি হয় এবং প্রত্যেকেই নিজেকে উৎসর্গ করার মানসিকতা পায় তখনো এটি জাতীয়তাবাদের ফল বলে নেওয়া যায়— এই অবস্থাকে বলে ‘মিথ’। ইতিহাসের মাধ্যমে একটি বিষয় প্রত্যক্ষ হয়ে ওঠে যে, জাতীয়তাবাদের একটি বড় সম্ভাবনা থাকে এবং ঐতিহাসিক প্রয়োজনে এটি বড়শক্তি নিয়ে কাজ করতে পারে।
জাতীয়তাবাদের এই গতিধারায় কখনো ধর্মকে সে ভিত্তি করেছে আবার ঐতিহাসিক প্রয়োজনে ধর্মকে তার পথ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। সি, জে, হায়েস’র সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ হলো, “জাতীয়তাবাদ তখনই খুব বড় হয়ে দেখা দেয় যখন একটি ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে একাকার হয় এবং জাতীয়তাবাদই তখন ধর্ম হয়ে ওঠে অথবা ধর্মের বিকল্প হয় জাতীয়তাবাদ।”১৭
আরও পড়ুন:

![জাতীয়তাবাদের ধারণা [ The Concept of Nationalism ]](https://politicsgurukul.com/wp-content/uploads/2024/02/%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%80%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A6%BE-The-Concept-of-Nationalism--1024x536.jpg)